সেই বাংলাদেশ থেকে এই বাংলাদেশ হয়ে উঠার গল্প! - অজানা ১০১
,

Post Top Ad

.com/blogger_img_proxy/.com/blogger_img_proxy/

Friday, December 14, 2018

সেই বাংলাদেশ থেকে এই বাংলাদেশ হয়ে উঠার গল্প!


.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhdD978sWQcO7sp0ueyi0BoO8ixlG3jLgd3SrlUijJS4XZw9jyFlKkzEkj5PylQdX5Ox_86VmfcfC95NzK97majSV6p7x3TL77jE_kSPI4eJvWZBpk64jReltIbeNAbxjlg43bqV701tMoI/s640/


 ক্রিকেট খেলা দেখার সাথে আমার পরিচয় ২০০৩ সালে যখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম। ছোটবেলায় বাবা অনেক খেলা দেখত আর আমিও তখন বসে যেতাম বাবার সাথে। স্পষ্ট মনে আছে তখন বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজ চলছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার খেলে অল-আউট না হয়ে ১৩৪ করেছিল আর তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৮৬ রান তুলেছিল। তখন বাংলাদেশের পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করা কিংবা ১৬০ রানের বেশি করাই ছিল যেন একটা আনন্দের উপলক্ষ। আমাদের এলাকায় তখন ক্রিকেট বলতেই ছিল ভারত-পাকিস্তানের খেলা। তখন ভারত-পাকিস্তান খেলার উত্তেজনা যেন ফুটবলের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতই ছড়িয়ে পড়ত এলাকাতে।

gettyimages-1201969-1024x1024-678x381

আমাদের বাবা-চাচা-ফুফাদের কাছে শুনতাম কপিল দেব, জাভেদ মিয়াদাদ,জোয়েল গার্নার কিংবা ভিভ রিচার্ডসের কথা। এরপর ৯০এর দশক গেল ওয়াসিম আকরাম, সৌরভ গাঙ্গুলি আর ওয়াকার ইউনুসের গল্প শুনতে শুনতে। বাংলাদেশ তখন এক পুচকে শিশু। বড় ভাইদের কাছে শুনেছি বাংলাদেশ যখন ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জিতেছিল তখন নাকি সারা দেশে মহা-উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে যখন পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ তখন নাকি বাংলাদেশের উৎসব বিশ্বকাপ জয় করার উৎসবের চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর স্মৃতি

ছোটবেলায় তো বড় ভাইদের মুখে শুধুই ঐ জয়ের কথা শুনতাম। এরপর একুশ শতক আসে। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে। অনেক দেশ বাংলাদেশে এসে ম্যাচ খেলে যায় কিন্তু বাংলাদেশ কখনও জিতে না। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হারিয়েছিল স্কটল্যান্ড এবং শক্তিশালী পাকিস্তানকে৷ কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপ যেন বাংলাদেশের জন্য ছিল একটা দুঃস্বপ্ন। কোনও ম্যাচে জয়তো পেলই না বরং কানাডার মত দলের কাছেও লজ্জাজনকভাবে হারল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে জয়ের পর অনেক ম্যাচই খেলল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই জয় আর ধরা দিচ্ছিল না। মাঝে ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিততে জিততে ১ উইকেটে হেরে যায়। খালেদ মাহমুদসহ সারা বাংলাদেশ কেঁদেছিল সেদিন। ৫ বছর কেটে গেল কিন্তু জয় যেন অধরাই রয়ে গেল বাংলাদেশের কাছে!! এরপর আসল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

05f20693be5513039eab82de66503df0-595x381


২০০৪ সালের ২০ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ রানের জয় ছিল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের প্রথম জয় আর সবমিলিয়ে চতুর্থ জয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে পরের দিন পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম ছিল, “কতদিন পর বাংলাদেশের জয়!” সে বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ তাদের শততম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারতের বিপক্ষে। এমনিতেই ছিল শততম ম্যাচ, তার উপরে তখনকার বাংলাদেশ যখন ভারতকে ১৫ রানে হারিয়ে দিল তখন আমার মত ক্লাস টু পড়ুয়া বাচ্চাদেরও যেন আনন্দের সীমা ছিল না।

শততম ম্যাচে স্মরণীয় জয়

২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসেই বাংলাদেশ আমাদের এনে দিল আরও বেশি বড় উপলক্ষ। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতার সাথে সাথে জিতে নিল প্রথম টেস্ট সিরিজও। টেস্ট সিরিজ জিতার পর জিতে নিল ওয়ানডে সিরিজও।

100th-odi-678x381

তখন বাংলাদেশের তারকা বলতে ছিল বর্তমান তারকা তামিমের অগ্রজ নাফিস ইকবাল, হাবিবুল বাশার, তাপস বৈশ্য, মাশরাফি মুর্তজা, মানজারুল ইসলাম রানা, আশরাফুল প্রমুখ। বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলার কৃতিত্বে আরেকজন ছিলেন যিনি হলেন তখনকার বাংলাদেশের কোচ ডেভ হোয়াটমোর। আজও বাংলাদেশ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ডেভ হোয়াটমোরকে।

হোয়াটমোরকে আজও স্মরণ করে বাংলাদেশ

86c6dc987b1ce410cbdfcffac73a_grande

১৮ জুন ২০০৫ সালে নতুন এক ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ। তখনকার অস্ট্রেলিয়া দল এমনই শক্তিশালী ছিল যে, অস্ট্রেলিয়ার সমকক্ষ কোনো দল ছিল না। কার্ডিফে আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে ভর করে সেদিন অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

২০০৫ সালের কার্ডিফের স্মৃতি

আস্তে আস্তে বাংলাদেশকে সমীহ করা শুরু করে অন্য দলগুলো। বাংলাদেশ হয়ে উঠে অঘটন ঘটানো একটা দল। বাংলাদেশ তখন যে কোনো ম্যাচে ফেভারিট না থাকলেও হঠাৎ হঠাৎ বড় দলগুলোকে হারিয়ে কঠিন বিপদে ফেলতে পারত। যতই দিন যেতে থাকে বাংলাদেশের জয়ের ধারা ততই বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটিয়ে বসে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে। সেবার বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় করে দেয় শক্তিশালী ভারতকে। সেই ম্যাচেই তামিমকে হয়তোবা চিনেছিল ভারতকে যার পরিপূর্ণতা পেয়েছে আজকে।

২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে মধুর স্মৃতি

২০০৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে থিতু হয়ে বসেন বর্তমান বাংলাদেশ দলের ভরসার নামগুলো যেমন- সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ প্রমুখ।

bd-vs-ind-2007-678x381

জয়ের ধারায় থাকলেও কিছু কিছু সময় হোঁচটও খেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ ওয়ার্ল্ড টি টুয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিত হার কিংবা ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে না পারার ব্যর্থতাই হয়তোবা আজকের বড় বাংলাদেশ হয়ে উঠার শিক্ষা ছিল। বাংলাদেশ জিতলেও তখনও জয়ের ধারাবাহিকতা আসে নি। ২০১২ এশিয়া কাপে প্রথম ধারাবাহিকতা দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার এশিয়া কাপে ভারত এবং শ্রীলংকাকে পেছনে ফেলে পাকিস্তানের সাথে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। ফাইনালে ২ রানে পরাজয়ের পর সাকিব-তামিমদের কান্না আজও দেশের মানুষদের কষ্ট দেয়।

২০১২ সালে ফাইনালে ২ রানে হারার দুঃস্মৃতি

২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের এশিয়া কাপটা ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপের মতই একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু সমস্ত দুঃস্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজা অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ থেকেই নতুন বাংলাদেশকে দেখে বিশ্ব। সেবার অস্ট্রেলিয়ার প্রতিকূল কন্ডিশনেও ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের পর একে একে ওয়ানডে সিরিজে পরাজিত করে পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

tiger-cring-678x381

শুরু হয় নতুন বাংলাদেশের পথচলা। মানুষ ভুলে যেতে থাকে আগের সাপোর্ট করা ভারত, পাকিস্তান কিংবা অন্য দলগুলোকে। মানুষের তখন থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। আগে ছোট ছোট দলগুলোর সাথে ঘন ঘন সিরিজ খেলত বাংলাদেশ। কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ঘন ঘন সিরিজ খেলা শুরু করল বড় দলগুলোর সাথে। এতদিন বাংলাদেশ শুধু ওয়ানডেতে ভালো করত। আস্তে আস্তে বাংলাদেশ টেস্ট এবং টি টুয়েন্টিতেও ভালো করা শুরু করল। এইতো কিছুদিন আগেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজকে সিরিজ হারিয়ে আসল বাংলাদেশ। অন্য বড় দলগুলোর মতই হার জিতের সমন্বয়েই চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই বদলে গেছে বাংলাদেশ

17bangla1

বাংলাদেশ এখন নিয়মিতই জিতছে। কিন্তু বাংলাদেশ জিতলে আগের মত উৎসব এখন আর হয় না। হয়তোবা দেশের মানুষ উৎসবটা জমিয়ে রেখেছে কোনও একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতলে উৎসব করবে বলে কিন্তু আমাদের প্রজন্ম একটা দিক দিয়ে অনেক সৌভাগ্যবান। আমরাই প্রথম প্রজন্ম যারা সেই বাংলাদেশ থেকে এই বাংলাদেশ হয়ে উঠা নিজের চোখে দেখেছি। আমরাই প্রথম প্রজন্ম যারা পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের বীরত্বগাথার গল্প বলতে পারব, বলতে পারব মাশরাফির দেশপ্রেমের আবেগ কিংবা তামিমের ভাঙা হাত নিয়ে এক হাতে লড়ার মত শত শত গল্প।

No comments:

Post a Comment