হতভাগা ইতালী প্রবাসী; মা ছাড়া কেউ লাশ দেশে নিতে চায়নি! অথচ স্ত্রীকে উপার্জনের সব টাকা দিতো - অজানা ১০১
,

ব্রেকিং

Post Top Ad

PropellerAdsPropellerAds

Monday, January 21, 2019

হতভাগা ইতালী প্রবাসী; মা ছাড়া কেউ লাশ দেশে নিতে চায়নি! অথচ স্ত্রীকে উপার্জনের সব টাকা দিতো


মো: মেসবাহ উদ্দিন আলাল, ভেনিস, ইতালিঃ প্রবাসে রাত-দিন পরিশ্রম করে যার আয়ের টাকায় সংসার চলছিলো, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরলো, সে মারা যাওয়ার পর তার লাশটুকু দেখারও প্রয়োজন মনে করলো না। এই হলো প্রবাসী, এই হলো রেমিটেন্স সৈনিক, যাদের হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের উপরই দাড়িয়ে আছে অামাদের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তেমনি এক ইতালি প্রবাসীর বাস্তব কাহিনী যে কারো হৃদয়ে নাড়া দিবে।




৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১১টা আইয়ুব মোড়লের সাথে কথা বলছিলাম, আইয়ুব তখন হসপিটালে মিজানুরকে দেখতে গিয়েছে, আইয়ুব বলতেছিলো মিজানের অবস্থা খুব একটা ভালো না, এই কথার সাথে সাথেই বললো, ও মনে হয় মারা গেলো, এখন তো কোনো কথা বলে না, আমি বললাম ডাক্তারকে ডাক দে, ডাক্তার এসে বললো মিজান মারা গেছে, আগামী কাল ৮টায় একজন রেসফন্সিবল লোক নিয়ে আসতে হবে, ডিউটি বাদ দিয়ে সকাল ৮টায় আমি আইয়ুব ও নাসির তিনজন হসপিটালে গেলাম, ডাক্তার বললো, এই কাগজে সই দিয়ে লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখতে হবে।




রাতেই মিজানের স্ত্রী ও মাকে জানানো হয়েছিল যে মিজান ইন্তেকাল করেছে, মিজানের ছোট ভাইয়ের সাথে কথা হলে ফোনে, মিজানের ছোট ভাই জিজ্ঞাসা করলো যে, ওখান থেকে লাশ পাঠাতে কোনো টাকা পয়সা লাগবে কিনা? আইয়ুব বললো হ্যাঁ লাগবে, লাশ পাঠাতে টাকা পয়সা লাগবে শুনে ফোনের লাইনটা কেটে দিল আর ফোন রিসিভ করলো না। কিছুক্ষন পর মিজানের স্ত্রী ও শশুরের সাথে কথা হয়, মিজানের স্ত্রী ও শশুর জানতে চায়, ইতালিতে লাশ মাটি দেয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি? যদি মাটি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে তাহলে সেখানে মাটি দিলেই ভালো হয় ।




কারণ হিসেবে তারা বললো, যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে, চোখের দেখা দেখে আর লাভ কি? লাশ বাংলাদেশ নেওয়ার আগ্রহ নাই বুঝতে পারলাম, অথচ এই মিজানুরের টাকা দিয়েই কিন্তু সে বিলাসবহুল জীবনযাপন কাটিয়েছে এবং মিজানুর ইউরোপ আসার পর থেকে যত টাকা কামিয়েছে সব টাকা তার বউ এর একাউন্টে পাঠিয়েছে এমনকি ঢাকা শহরে একটা জায়গাও রেখেছে এই বউ এর নামে, আর আজ সেই মানুষটাকে এক নজর দেখার ইচ্ছা হলো না, এই হলো সোনার সোহাগী বউ , যার কথায় দুনিয়ার সবাইকে পর করে দিতে পারি এমনকি গর্ভ ধারিণী মাকেও।




এবার কথা হলো মিজানের গর্ভধারিণী মায়ের সাথে, আকাশ বাতাস ভারী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল, বাবা আমি গরিব মানুষ লাশ দেশে আনতে টাকা দিতে পারবো না,কিন্তু আমার নাড়িছেঁড়া ধন,আমার কলিজার টুকরা জাদুর মুখ খানি একনজর দেখতে চাই, শুধু এই টুকু অনুরোধ তোমাদের কাছে বাবা। মায়ের নি:স্বার্থ ভালোবাসার আকুতি শুনে একফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো, বুঝতে পারলাম মায়ের ভালোবাসা কত গভীর, অথচ এই মাকে কখনো ১০০০০ হাজার টাকা দিয়ে বলেনি যে, মা এটা তুমি রাখ কিছু খেয়ে নিও।




তারপরও কি মায়ের অভিমান ছিল? ছিল না সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতো যে, হে আল্লাহ আমাকে ওরা দেয় না দেয় কোন সমস্যা নাই কিন্তু এদেরকেও তুমি সুখে রেখ, এদের সুখ-ই আমার সুখ আমরা হতবাগা প্রবাসীরা যখনি নাড়িরটানে দেশে যাই ,আত্মীয়স্বজন সবাই বলে কার জন্যে কি নিয়েছি, শুধু মা-ই বলে আমার জাদুর মুখখানি এতো মলিন ক্যান? মিজানের মা শেষবারের মতো তার জাদুর মুখখানি দেখতে চায়, বললাম মিজানের লাশ দেশে যাবে, ইনশাআল্লাহ, খরচ যা লাগে সেটা আমরাই ব্যবস্থা করে দিবো দিন কয়েক পর, কিছুক্ষন পরপর মিজানের স্ত্রী আইয়ুবকে ফোন দেয়,



মিজানের লাশ আমার নামে পাঠান নয়তো আমার আব্বার নামে পাঠান,মিজানের ভায়েরাও ফোন দেয়, লাশ আমাদের নামে পাঠাও, আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে, লাশ দেশে পাঠাতে টাকা লাগবে শুনে ফোন কেটে দেয়, ইতালিতেই মাটি দিতে বলে আর বলে কি মরা লাশ দেখে আর লাভ কি? এতক্ষনে বুঝতে পারলাম কারণটা কি? কারণটা হলো তারা জানতে পেরেছে লাশের সাথে কিছু অর্থও যাবে, তাই যদি লাশটা আমার নামে আসে টাকাগুলো আমি পাবো




যাই হোক, ২২ নভেম্বর বুধবার লাশ পাঠানোর কথা ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে লাশ পৌঁছাবে। মিজানের লাশ পাঠানোর খরচ বাদ দিয়ে কিছু অর্থ আমাদের কাছে অবশিষ্ট থাকবে, মিজান ছিলো নি:সন্তান, তার কোনো সন্তান নাই, মিজানের আরও তিন ভাই আছে, কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে ভাইয়েরা অতটা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না, মিজানের বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় মিজানের মা বাবা আলাদা হাড়িতে পাক করে খেত, মিজানের বাবা মারা যাওয়ার পরও আলাদা হাড়িতে পাক করে খাচ্ছে মিজানের মা। এমতাবস্থায় কিভাবে সেই অবশিষ্ট অর্থ বন্টন করা উচিত, সেটা নিয়েই আমরা এখন চিন্তিত।

No comments:

Post a Comment