মাসের বিশেষ দিনগুলোতে চাই বাড়তি যত্ন। এই সময়ে শরীরে ও পেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। অস্বাস্থ্যকর খাবার এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে ঋতুস্রাবের সময় যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলোর তালিকা এখানে দেওয়া হল।
নোনতা খাবার: লবণ ছাড়া খাবার অসম্ভব। তবে এটাও জানা দরকার, লবণ শরীরে পানি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে, ঋতুকালীন ও এর নিকটবর্তী সময়ে বেশি লবণ সমৃদ্ধ খাবার ব্যথা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। তাই মাসে এই কটা দিন সোডিয়াম-জাতীয় খাবার কমানো উচিত।
ক্যাফেইন: ব্যথা ও ফোলাভাবের কারণে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। ঋতুস্রাবের সময় ক্যাফেইন জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে। তাই ব্যথা ও অস্বস্তির সৃষ্টি হয়।
মিষ্টি: এই সময়ে শরীরে চিনির চাহিদা হওয়া স্বাভাবিক। তবে মনে রাখতে হবে এসময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিণে রাখাও জরুরি। চিনিযুক্ত খাবার, পানীয় ব্যথা বাড়ায়। মিষ্টির চাহিদা পূরণ করতে প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন- গুড়, খেজুর, ডুমুর খাওয়া ভালো।
দুগ্ধজাত খাবার: ‘ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স’ বা দুধ-জাতীয় খাবার সহ্য না হওয়া সাধারণ একটি সমস্যা। এই ধরনের খাবার পেট ফোলাভাব সৃষ্টি করে। এতে উপস্থিত অ্যারাকিডোনিক অ্যাসিড নামক ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড পেটব্যথা ও হজমের সমস্যা তৈরি করে। দুধ ও দুধ-জাতীয় খাবারই এর জন্য দায়ী।
প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত বা ক্যানজাত খাবার এই বিশেষ সময়ে ব্যথার প্রখরতা বাড়ায়। এসব খাবারে অতিরিক্ত চর্বি, সোডিয়াম ও চিনিই মূলত ব্যথা বাড়ানোর কারণ। সত্যি বলতে, খাবারগুলো দেখতে খুব সহজ মনে হলেও এগুলোই শরীরের জন্য বেশি খারাপ। [১]
মাসিকের সময় যে ৫টি খাবার খাওয়া জরুরি
পিরিয়ড, মাসিক বা মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্র (Menstruation) প্রত্যেক নারীর জীবনেরই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সমাজে এক ধরনের সংস্কার কাজ করে। ফলে অনেক নারীই বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অথচ এ সময়ে নারী দেহের জন্য অতিরিক্ত পুষ্টি দরকার। প্রয়োজন বাড়তি কিছু খাবার গ্রহণ। পিরিয়ডের দিনগুলোতে রক্তক্ষরণের কারনে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সহ এ সময়ে নারীকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে কিছু খাবার গ্রহণ বেশ জরুরি। চলুন সেই খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নেই-
১. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: যেসব খাবারে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় মাসিকের সময় তা নিয়মিত খাবার চেষ্টা করতে হবে। যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, কচু শাক, পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, ফুলকপির পাতা, ছোলা শাক, ধনে পাতা, তরমুজ, কালো জাম, খেজুর, পাকা তেঁতুল ও আমড়া। এই খাবারগুলো শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে।
২. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: শরীরে আয়রনের ঠিকমত শোষণ ও যথাযথ কার্যকারিতার জন্য ভিটামিন সি অতীব জরুরি। এ কারনে মাসিকের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। বেশ কিছু পরিচিত ফলে প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যেমন: পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, লেবু, জলপাই, জাম্বুরা, পাকা টমেটো, কামরাঙা, পাকা পেঁপে, আনারস ইত্যাদি। আমাদের দেশ এসব ফল খুবই সহজলভ্য। মাসিকের সময় এ ফলগুলো খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৩. বিশেষ ধরনের শরবত ও ফলের জুস: মাসিকের দিনগুলোতে বিশেষ রেসিপির ফলের জুস ও শরবত শরীরকে চাঙা রাখে। এখানে একটি রেসিপি সম্পর্কে আলোচনা করছি। এই রেসিপির জুস দিনে ২ বার খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে মাসিকের দিনগুলিতে এই জুস শরীরকে ফ্রেস রাখতে বেশ সহায়ক।
রেসিপি: প্রথমে ১টি বড় কাপ নিতে হবে। এবার ১ টি সবুজ রঙের আপেল নিয়ে জুস করে ঐ কাপে রাখতে হবে। এরপর এর সাথে ৩টা গাজর জুস করে মিশাতে হবে। তারপর ২টা বীট জুস করে কাপে রাখতে হবে। সবশেষে অর্ধেকটা কাগজি লেবুর রস ঐ কাপে মিশিয়ে পুরো মিক্সারটি ভালভাবে নাড়তে হবে। মাসিকের সময় এই জুসটি দিনে ২ বার করে পান করলে উপকার পাওয়া যাবে।
৪. পানি: মাসিকের সময় রক্তপাতের পাশাপাশি শরীর থেকে অনেক খানি তরল বেরিয়ে যায়। এই অভাব পূরণ করার জন্য এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, চা, কফি, কোলা ইত্যাদি দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। সাধারণ পানিই শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সব চাইতে বেশি কার্যকর। চাইলে, হালকা কুসুম গরম পানি পান করা যেতে পারে। এতে অনেক সময় পেট ব্যথা থাকলে আরাম পাওয়া যায়।
৫. বাদাম: বাদামে নানান রকম ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এগুলো মাসিকের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে লবণে ভাজা বা চিনি মেশানো বাদাম খাওয়া উচিত নয়। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা, আখরোট ইত্যাদি পিরিয়ডজনিত শরীরের ঘাটতি পূরণে বেশ উপকারী। [২]
মাসিকে ব্যথা হলে চিকিৎসা কী
ডিসম্যানোরিয়া বা মাসিকের সময় ব্যথা নারী শরীরের একটি প্রচলিত সমস্যা। এটি কখনো কখনো বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের অধ্যাপক ডা. কিশোয়ার সুলতানা।
প্রশ্ন : ডিসম্যানোরিয়া বিষয়টি কী?
উত্তর : ডিসম্যানেরিয়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি ভাষা। একটি মেয়ের শুধু মাসিকের সময় যে ব্যথা হয় তাকে ডিসম্যানোরিয়া বলা হয়।
প্রশ্ন : এই ব্যথা কী কেবল মাসিকের সময় হবে?
উত্তর : মাসিকের সময় হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো সময় হবে না।
প্রশ্ন : ডিসম্যানোরিয়ার সমস্যা সাধারণত কাদের ক্ষেত্রে হয়?
উত্তর : এটা আসলে সবার হতে পারে। ছোট বয়সে হয়তো মেয়েটির মাত্র মাসিক শুরু হয়েছে, তখন থেকে সমস্যা হতে পারে। একে আমরা প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়া বলি। আরেকটি ডিসম্যানোরিয়া আছে। আগে তার হয়তো সমস্যাটি ছিল না, একটু বয়স হওয়ার পর ব্যথা শুরু হলো। হয়তো একটা বাচ্চা হয়েছে, অথবা বয়স ৩০, ৩৫ বা ৪০-এর উপরে উঠে গেছে। তখন তার ডিসম্যানোরিয়া বা ব্যথা পূর্ণ মাসিক হতে পারে। সেটাকে আমরা সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়া বলি।
প্রশ্ন : যখন এই ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে একটি মেয়ে যায়, সাধারণত কী ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসে আপনাদের কাছে?
উত্তর : সে এসে বলে আমার মাসিকের সময় ব্যথা হয়। এটা তার প্রথম অভিযোগ।
প্রশ্ন : ব্যথার মাত্রাটা কতখানি থাকে?
উত্তর : এটা তার বয়সের ওপর নির্ভর করে। যেমন : কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ব্যথা শুরু হবে মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে এবং ২৪ ঘণ্টার মতো ব্যথাটি থাকে। ব্যথাটা এতই থাকে যে সে অন্য কোনো কাজ করতে পারে না। তার দৈনন্দিন কাজ ব্যহত হয়। হয়তো সে স্কুলে বা কলেজে যেতে পারল না ব্যথার কারণে। তবে কিছু কিছু ব্যথা আছে যেটা অল্প, সহনীয়। এ রকম অল্প ব্যথা সবারই হতে পারে। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
প্রশ্ন : যখন তীব্র ব্যথা হয় এটি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আপনারা কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : প্রাইমারির ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে সেসব তরুণীকে আমরা কাউন্সিলিং (পরামর্শ) দেই। এটা যদি তাকে নিশ্চিত করা যায় সমস্যাটি ভালো হয়ে যাবে, তুমি কিছুদিন অপেক্ষা করো, তাহলে সে কিছুটা আশ্বস্ত হয়। নয়তো সে খুব চিন্তিত থাকে। সে একটু আতঙ্কেও থাকে যখন মাসিকের সময়টি কাছে আসতে থাকে তখন। বিশেষ করে যখন হয়তো পরীক্ষা চলে আসছে তখন তারা বলে, আমি এখন কী করব? এ ধরনের প্রশ্নগুলো আমরা অনেক পাই।
আমরা বিষয়টিকে আশ্বস্ত করি এবং ব্যথা নাশক ওষুধ দিয়ে থাকি। এনেলজেসিক জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। বলি, তোমার সমস্যাটি ভালো হয়ে যাবে, তুমি এই ওষুধটি খাবে। ওষুধ আমরা দুই তিনদিনের জন্য দিয়ে দেই।
আর সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়া অন্য রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে হয়। যেমন : জরায়ু এবং এর আশপাশের অংশের প্রদাহের কারণে এই সমস্যা হতে পারে। অথবা আরো কিছু রোগের কারণে হতে পারে। যেমন : এন্ডোমেট্রিওসিস, এডিনোমায়োসিস ইত্যাদি।
প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে করণীয় কী?
উত্তর : সে ক্ষেত্রে ওই রোগটিকেই চিকিৎসা করতে হবে। তাহলেই এই ব্যথাটি অনেকখানি কমে আসবে।
প্রশ্ন : প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার চিকিৎসা না নেওয়া হলে ঝুঁকি কী হতে পারে?
উত্তর : প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার কোনো ঝুঁকি নাই। ঝুঁকিটা হচ্ছে, সে স্বাভাবিক কাজটা করতে পারছে না, ওই নির্দিষ্ট দিনে এবং তার মা-বাবা অনেক চিন্তিত হয়ে যায় এ সময়। সে কারণেই আমাদের কাছে ওরা প্রধানত আসে।
ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়ার ফলে এগুলো অনেক কমে আসে। শুধু ওই সময়টার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সে যদি কোনো ওষুধ নাও খায় তবুও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যাটি একাই ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও অনেকে জোর করলে আমরা ওষুধ দিয়ে দেই।
প্রশ্ন : মাসিকের সময় যে ব্যথা হচ্ছে এর পেছনে কি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে?
উত্তর : আসলে জরায়ুর মুখটা যাদের খুব বেশি আঁটসাঁট ভাবে লাগানো থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা হয়। তবে বিয়ে হলে, তার বাচ্চাকাচ্চা নিতে সমস্যা হতে পারে- এই বিষয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে কিছু কিছু প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার সাথে এন্ডোম্যাট্রিওসিস রোগের সম্পর্ক আছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা তার আল্ট্রাসোনোগ্রাম করলেই সমস্যাটি বুঝতে পারি। এন্ডোম্যাট্রিওসিসের কারণে সমস্যা হলে চিকিৎসাটা ওই রোগের করা হবে।
প্রশ্ন : সতর্ক না থাকলে সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে কী কী ধরনের ঝুঁকি হতে পারে?
উত্তর : উপসর্গ হিসেবে যখন একজন রোগী বলে যে, আমরা ব্যথা ছিল না, ইদানীং ব্যথা হচ্ছে। তখন তাকে আমরা কিছু পরীক্ষা করি। যদি কোনো রোগ পাওয়া যায় তখন সে হিসেবে আমরা চিকিৎসা দেই। যেমন অ্যান্টিবায়োটিক দেব। তারপর যদি ফ্রাইব্রয়েড নামক টিউমারের কারণে ডিসম্যানোরিয়া হয়, এর চিকিৎসা করলেই ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : মাসিকের সময় যে ব্যথা হচ্ছে এর পেছনে কি কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে?
উত্তর : আসলে জরায়ুর মুখটা যাদের খুব বেশি আঁটসাঁট ভাবে লাগানো থাকে তাদের ক্ষেত্রে এই জিনিসটা হয়। তবে বিয়ে হলে, তার বাচ্চাকাচ্চা নিতে সমস্যা হতে পারে- এই বিষয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে কিছু কিছু প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়ার সাথে এন্ডোম্যাট্রিওসিস রোগের সম্পর্ক আছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা তার আল্ট্রাসোনোগ্রাম করলেই সমস্যাটি বুঝতে পারি। এন্ডোম্যাট্রিওসিসের কারণে সমস্যা হলে চিকিৎসাটা ওই রোগের করা হবে।
প্রশ্ন : সতর্ক না থাকলে সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে কী কী ধরনের ঝুঁকি হতে পারে?
উত্তর : উপসর্গ হিসেবে যখন একজন রোগী বলে যে, আমরা ব্যথা ছিল না, ইদানীং ব্যথা হচ্ছে। তখন তাকে আমরা কিছু পরীক্ষা করি। যদি কোনো রোগ পাওয়া যায় তখন সে হিসেবে আমরা চিকিৎসা দেই। যেমন অ্যান্টিবায়োটিক দেব। তারপর যদি ফ্রাইব্রয়েড নামক টিউমারের কারণে ডিসম্যানোরিয়া হয়, এর চিকিৎসা করলেই ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন: পরামর্শ কী থাকবে একটি মেয়ের জন্য যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে?
উত্তর: প্রথম পরামর্শ হচ্ছে প্রাইমারি ডিসম্যানোরিয়া যাদের হয় তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তারা ওই সময়ে ব্যথানাশক ওষুধ খাবে। আর ব্যথা যদি খুব তীব্র হয়, অসহনীয় হয়, আমরা কিছু পরীক্ষা তাদের করি।
আর সেকেন্ডারি ডিসম্যানোরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যথা যদি শুরু হয় তারা সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবে। কারণ এটা একটা উপসর্গ। ভেতরে যদি আর কোনো রোগ থাকে সেটাকে বের করতে হবে এবং সেই হিসেবেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগটি জটিলতার দিকে যাবে।[৩]
ওষুধ ছাড়াই পিরিয়ডের ব্যথায় প্রশান্তি পাবার ৫টি উপায়
প্রচন্ড পেট ব্যাথা! পিরিয়ড হলেই পেট ব্যথার যন্ত্রণায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যায় অনেক মেয়েরই। ক্লাস, ঘুম, বাসা, টিভি দেখা কোনো কিছুই যেন ভালো লাগে না মাসিকের ব্যাথা শুরু হলে। আবার অনেকেই বলেন যে মাসিকের ব্যথায় খুব ঘনঘন ব্যথার ওষুধ খাওয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কী করবেন এমন পরিস্থিতিতে? কি করলে কিছুটা প্রশান্তি পাওয়া যাবে পিরিয়ডের সময়ে? আসুন জেনে নেয়া যাক মাসিকের ব্যথায় প্রশান্তি পাওয়ার ৫টি সহজ উপায়।
গরম সেঁক: মাসিকের সময় প্রচন্ড তলপেট ব্যথা হয়। আর এই তলপেট ব্যথায় গরম পানির সেঁক নিলে পেট ব্যথায় বেশ আরাম পাওয়া যায় এবং কিছুটা কম অনুভূত হয় ব্যথা। তাই গরম পানির সেঁক দেয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন হট ওয়াটার ব্যাগ। যে কোনো ওষুধের দোকানেই পেয়ে যাবেন এই হট ওয়াটার ব্যাগ। গরম পানি ভরে নিলেই সেঁক দেয়া যায় এই হট ওয়াটার ব্যাগ গুলোতে। এছাড়াও ইস্ত্রি দিয়ে কাপড় গরম করেও সেঁক দেয়া যায়।
মনোযোগ সরিয়ে নিন: পেট ব্যথা শুরু হলে কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। যখন পেট ব্যথা হয় তখন অফিসের কাজ কিংবা ফেসবুকিং করা শুরু করে দিন। মুভিও দেখতে পারেন। ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা বলতে বলতে কিছুক্ষণ পর এমনিতেই মনোযোগ অন্য দিকে সরে যাবে এবং পেট ব্যথা কম মনে হবে।
ভিটামিনযুক্ত খাবার: মাসিকের ব্যথা কমাতে কিছু বিশেষ ভিটামিনের ভূমিকা আছে। আর তাই যারা মাসিকের সময় পেট ব্যথার যন্ত্রণায় ভোগেন তারা সবসময় ভিটামিন ই যুক্ত খাবার (চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, বাঁধাকপি, আম ইত্যাদি), ভিটামিন বি৬ (ভাত, মাছ,ওটমিল, কলা ইত্যাদি), ভিটামিন বি১ (ডিম, মাছ, সবুজ সবজি, গম ইত্যাদি) খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো খেলে পেশীর সংকোচনজনিত মাসিকের ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যাবে।
ম্যাসাজ: মাসিকের সময় শরীর ম্যাসাজ করিয়ে নিন ভালো কোনো পার্লারে গিয়ে অথবা ম্যাসাজে অভিজ্ঞ কারো কাছে। কারণ মাসিকের সময় পুরো শরীর ম্যাসাজ করিয়ে নিলে শরীর শিথিল থাকে এবং তলপেট ব্যথা কিছুটা কম হয়। ফলে মাসিকের সময় প্রশান্তি পাওয়া যায়।
অনিয়মিত মাসিকের ঘরোয়া প্রতিকার
পার্সলে: পার্সলেতে রয়েছে অ্যাপিওল এবং মাইরিসটিসিন যা মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। দিল্লির ফোর্টিস লা ফাম হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ডা. লোভনিত বাত্রা বলেন, “পার্সলেতে থাকা উপাদানগুলো দ্রুত ইউট্রাস গঠনে সাহায্য করে। ফলে মাসিক চক্র প্রভাবিত হয়।”
জিরা: পার্সলে এবং জিরায় রয়েছে প্রায় একই ধরনের উপকারিতা। তাই একই প্রক্রিয়ায় মাসিকের সময় এগিয়ে আনতে সহায়তা করে।
আজওয়াইন: মাসিক চক্র দ্রুত করার পাশাপাশি ওই সময় হওয়া পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করতেও আজওয়াইন বেশ উপকারী। এক চা-চামচ আজওয়াইন দানা এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে এক চা-চামচ গুঁড় মিশিয়ে সকালে খালি পেটে সেবন করলে উপকার পাওয়া যাবে।
পেঁপে: মাসিক এগিয়ে আসতে পেঁপে বেশ উপকারী ঘরোয়া টোটকা।
ডা. বাত্রার মতে পার্সলের মতো পেঁপেও ইউট্রাস গঠন প্রক্রিয়া গতিশীল করতে সাহায্য করে। পেঁপেতে থাকা ক্যারটিন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে, আর তাই পিরিয়ড দ্রুততর হয়।
আদা: রয়েছে এমেইনাগোগ নামক একটি উপাদান। যা রজঃস্রাব হওয়ার ক্ষেত্রে জাদুমন্ত্রের মতো কাজ করে। ফলে মাসিকের প্রক্রিয়া দ্রুত করতে সাহায্য করে।
তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পার্সলের সঙ্গে আদা দিয়ে চা খাওয়ার সুপারিশ করা হয়।
গরম পানি: অনেকের পিরিয়ডের শুরুতে তলপেটে এবং কোমরে প্রচুর ব্যথা হয়। এ সমস্যায় ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ দিয়ে ব্যথার জায়গায় সেক দিলে আরাম হতে পারে। এছাড়া গরম সেকের ফলে মাসিক দ্রুত শেষ হতে পারে। দিনে দুতিন বার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের সেক দিলে আরাম পাওয়া যাবে।[৪]
অ্যালোভেরার শরবত: পেটের বিভিন্ন সমস্যা উপশনে অ্যালোভেরা বেশ উপকারী। তবে এই পাতার রসেও রয়েছে এমেইনাগোগ নামক উপাদানটি। যা মাসিক নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
এক টেবিল-চামচ মধুর সঙ্গে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে সকালে নাস্তার আগে খেতে হবে। টানা এক মাস খেলে মাসিকের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
[১] ডিএইচডি [২] মোঃ নাহিদ নেওয়াজ জোয়ার্দার, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনলজি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর [৩] অধ্যাপক ডা. কিশোয়ার সুলতানা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের [৪] অনলাইন ডেস্ক
No comments:
Post a Comment