কাজকর্ম চলুক, দুর্ভিক্ষ-করোনা ঠেকানোর কাজও অব্যাহত থাকুক - অজানা ১০১
,

Post Top Ad

.com/blogger_img_proxy/.com/blogger_img_proxy/

Thursday, April 30, 2020

কাজকর্ম চলুক, দুর্ভিক্ষ-করোনা ঠেকানোর কাজও অব্যাহত থাকুক

no_image_card

লকডাউনে চারটি কাজ খুব জরুরি। করোনা বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেয়া, আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া, দুর্গতদের সাহায্য করা আর অর্থপ্রবাহের গতি ঠিক রাখা। প্রথম তিনটি চলমান থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে লকডাউনের কারণে অর্থপ্রবাহ, পণ্যপ্রবাহ ইত্যাদিতে স্থবিরতা এসেছে। বাংলাদেশ গরিব দেশ- এই স্থবিরতা সহ্য করার ক্ষমতা তার মোটেই নেই। সরকারি সিদ্ধান্তে এখন ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষে কি সম্ভব প্রত্যেকের জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানো! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, লকডাউন শিথিল করলে ভয়াবহ আকারে করোনা ছড়াবে। আবার লকডাউন শিথিল না করলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। এই উভয় সংকট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই সংকট বিশ্বব্যাপী। এই সংকটে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের একটা সমন্বিত সম্মিলিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল।

এই কথাটি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেজ করোনার প্রাথমিক বিস্তারের সময় বলেছিলেন। কিন্তু বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কর্ণপাত করেননি। জাতিসংঘের মহাসচিব ২৮ এপ্রিল পুনরায় বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন- চলমান করোনাভাইরাস মহামারিকে শ্রেষ্ঠতর পৃথিবী পুনর্গঠনের কাজে লাগানোর জন্য। একইসঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক হুমকি মোকাবিলায় তাদের একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান।

সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়ার গরজ যখন মোড়ল রাষ্ট্রপ্রধানরা অনুভব করেননি তখন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো এখন স্ব স্ব উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। শুধু ত্রাণ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র তার সব জনসাধারণকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না। অর্থপ্রবাহের ওপর যে বাধা আরোপ করা আছে তা সরাতে হবেই। মানুষের মধ্যে অর্থপ্রবাহের গতি না আসলে শুধু যে আকাল আর দুর্ভোগ সমাজকে অচল করে ফেলবে তা নয়, কেউ কেউ আন্দাজ করছেন অরাজকতাও সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা দীর্ঘায়িত হবে। প্রত্যেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে। মানুষ দুর্গত এলাকা থেকে স্বদেশমুখী হওয়ার কারণে করোনা ছড়িয়েছে বেশি। বাংলাদেশের কয়েক লক্ষ প্রবাসী এই পর্যন্ত দেশে ঢুকেছে। আমরা প্রথম থেকে তাদের তালাবন্দি না করে সারাদেশে ছড়াতে দিয়েছি আর যখন হুঁশ হলো তখন পুরো ১৭ কোটি মানুষকে তালাবন্দি করে রাখার কর্মসূচি নিয়েছি। এটা ছাড়া উপায়ও ছিল না। আর প্রবাসীদেরও আটকানো সম্ভব ছিল না কারণ স্বদেশে চলে আসা ছাড়া তাদের উপায় কী ছিল! মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের চলে যেতে বলছে। সৌদি আরব তিন মাসের বেতনও দিয়ে দিচ্ছে। যোগাযোগের অভাবের জন্য আসা সম্ভব হচ্ছে না, না হয় প্রবাসীদের ঢল নামত।

এক কোটির ওপরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ রয়েছে। যেসব দেশে তারা রয়েছে সেইসব দেশ রাখতে না চাইলে তো চলে আসতে হবেই। বাংলাদেশ সরকার অন্তত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে কোনো বিহিত ব্যবস্থা করার অনুরোধ করতে পারে। তারাও তো অর্থ ও পণ্যব্যবস্থার স্থবিরতার মধ্যে পড়েছে। তাদেরও গতি সঞ্চালনের ব্যবস্থা করতে হবে। তখন তো তাদের জনশক্তির প্রয়োজন হবে।

ওমান, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত- এইসব দেশে তাদের নিজস্ব নাগরিকতো খুবই কম। তাদের শক্তি তো প্রায় পুরোটাই প্রবাসী এবং তার মধ্যে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি রয়েছে। এই সমস্যাটা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত উল্লাখিত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা এবং বাংলাদেশি লোকগুলো যেন স্থানচ্যুত না হয় তার একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা।

আমাদের দেশের কিছু কিছু নেতা-নেত্রী বা সরকারি কর্মকর্তা প্রবৃদ্ধির কথা বলতে ভুল করেন না। এখন প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানো ঠিক হবে না। আমরা বিশ্বের কোনো কোনো দুর্যোগপূর্ণকাল অতিক্রম করার সময় বহু সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি মাইনাস পর্যায় পৌঁছতে দেখেছি। তাতে ভীত হওয়ার কিছু নেই। এখন ভয়াবহ দুর্যোগের কাল। এখন ১৭ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান করাই বড় কাজ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এদেশে কৃষি খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে পারবে।

এবার বোরো ফসল ভালো হয়েছে। ফসল কেটে সফলভাবে ঘরে তোলাটাই হবে প্রধান সফলতা। কারণ কৃষি শ্রমিকদের অভাব দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা মাঠে নেমে ফসল কেটে কৃষককে সাহায্য করছে। আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য জাতি তাদের স্মরণে রাখবে। কোথাও কোথাও ফটোসেশন হয়েছে, সমালোচনাও হয়েছে। সেসব গণনায় ধরলে হবে না। আমরা প্রত্যাশা করি তারা অব্যাহতভাবে এই কাজে সহায়তা দিয়ে যাবে। ভালো কাজের প্রচেষ্টার কথা ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি বুধবার (২৯ এপ্রিল) ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এ নিয়ে টুটুট করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণকে পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছি। আমরা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং ভারত এবং বাংলাদেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে সেসব নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অন্যতম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে অব্যাহত থাকবে।’

ক’দিন পর বন্যা আরম্ভ হলে মোদি সাহেব কিন্তু এসব মনে থাকবে না। ভারত থেকে বন্যার পানি এসে আমাদের ফসল নষ্ট করে দিতে পারে। সুতরাং ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আনসাররা ফসল কাটার ব্যাপারে যেন কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখে। অন্যদলগুলোও এগিয়ে আসতে পারে। সঠিকভাবে ধান কাটা গেলে কিছুটা স্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হবে আর আমনের প্রস্তুতি নেয়া যাবে। দুর্ভিক্ষ এড়ানো যাবে সহজে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব খোরাকির ধান যেন গোলায় তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। যেহেতু এই দুর্যোগ বিশ্বকে গ্রাস করছে তাই খাদ্যের ব্যাপারে সবাই সতর্ক হবে। কেউ কাউকে খাদ্য দিতে চাইবে না।

গ্রামে একটা কথা বলা হয়- গোলায় ধান থাকলে নুনের ছিটা দিয়ে খানা খাওয়া যায়। আমরা যেন সেই ভরসা সৃষ্টি করতে পারি। এ দেশ কিন্তু পদ্মা, মেঘনা, যমুনার বদ্বীপ। ভাটি এলাকা শত শত বছরব্যাপী দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। ১৯৬০ সালে উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসে এক সন্ধ্যায় মানুষ মরেছে ১০ লাখ। আবার ১০ বছরের মাথায় ১৯৭০ সালে পুনরায় উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের মানুষ মরেছে ১০ লাখ। করোনায় সারাবিশ্বে এত মানুষ মরেনি, হয়তো বা মরবেও না। স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষের মৃত্যু আছে। মৃত্যু না থাকলে তো পৃথিবীর বদহজম সৃষ্টি হতো।

সুতরাং মৃত্যুকে ভয় করে সবকিছু ছেড়ে তালাবন্দি হয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। অর্থপ্রবাহের কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করতে হবে। আর পণ্যপ্রবাহও রুদ্ধ করা যাবে না। আমরা যদি লকডাউনে করে বসে থাকি তবে অনাহারে মরে যেতে হবে। এই ক্ষেত্রে যারা সফলতা পেয়েছে সেসব দেশকে অনুকরণ করা যেতে পারে। কাজকর্ম চলুক, করোনাকে ঠেকানোর কাজও অব্যাহত থাকুক। করোনা একসময় এসে ক্লান্ত হবে।

আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুরা তো চেষ্টা করছে প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে। ব্রিটিশ আর জার্মানরা মানবদেহে তাদের আবিষ্কৃত টিকা প্রয়োগ করেছে। তারা ৯৫ ভাগ সফলতার আশাবাদ ব্যক্ত করছে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আর্কাইভ হলো ইউরোপ। আশা করি তাদের উদ্ভাবিত প্রতিষেধক মানবজাতিকে দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ দেবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, ইরাক ও আফগান যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহের জন্য খ্যাত।
anisalamgir@gmail.com

এইচআর/বিএ/জেআইএম

No comments:

Post a Comment